একটা সময়ে শনিবার দুপুরের সঙ্গে বাঙ্গালীর এক অদ্ভুত রোমান্টিসিসম জড়িয়ে ছিল । সে ময়দানের বেঞ্চিতে চিনেবাদাম চেবানো কিংবা বসন্ত কেবিনের কাটলেট। দুপুর তিনটের বেতার নাটক কিংবা বিগার্ডেন মুখী লঞ্চে গঙ্গার হাওয়া। লিগের বড় ম্যাচই হোক কিংবা চা-পান বিরতির পর ইডেনে ম্যাজিক। হালের শনিবার যেন হারিয়ে গেছে মনিস্কোয়ারের ফুডকোর্টে, শপারস্টপের সেলে আর উইকেন্ডের লংড্রাইভে। আর তাদেরই মাঝে চিরন্তনী রোমান্টিক শনিবারের ম্যাটিনি শো ধুঁকছে প্রতিটি টোরেন্ট ডাউনলোডের চাপে।
এরকমই এক পরিস্থিতিতে এবার পুজোয় ছ-ছটা ছবি ! বাঙ্গালী ঠাকুর দেখবে না সিনেমা দেখবে ? সে নাহয় হল, আর প্রবাসী কি বসে থাকবে শীতকাল অব্ধি এই আশায় যে, তখনো একটা দুটো সিনেমা চলবে ? দেশী কিংবা প্রবাসী, বেশীরভাগ এর কোনটাই করবেনা। লর্ডস বেকারীর মোড়ে দাঁড়িয়ে মুকেশ আম্বানির কল্যাণে কিংবা কোপেনহেগেনে শুয়েশুয়ে তড়িৎ গতির ডি এস এলে টপাটপ সিনেমা নামাবে আর প্রযোজক-পরিচালক-পরিবেশক চিন্তার বলিরেখা নিয়ে সিনেমা সমালোচককে ধরবে দুটো ভাল কথা লেখার জন্য। সিনেমা সমালোচক সিংগল মল্টের ঋণ চোকাবে ফেসবুকে কমেন্ট করে, সেটাই আবার রিটুইট করে পরিচালক সেই চোরাশিকারিদেরই টাইম লাইন ভরাবে। কে কার ভাত মারছে বোঝার আগেই এসে যাবে পরের মুহুরত। আর, বাংলা সিনেমার কিছু হবেনা এই নিয়ে গেল গেল রব তুলবে উৎকৃষ্ট বাঙ্গালী দর্শক। যার ল্যাপটপ ঘাঁটলে তখনো পাওয়া যাবে টোরেন্টের অবশিষ্ট।
এই এক আবহাওয়ায় ‘সম্প্রীতি মিউনিখ’র সঙ্গে গাঁট ছাড়া বাঁধল ‘উইন্ডোস ফিল্ম প্রোডাক্সন্স’। কাকতলীয়, প্রত্যাশার পারদ নাকি যুগান্তকারী এক মেলবন্ধন ? কোনটাই নয়। কারণ ‘সম্প্রীতি’ কিঞ্চিত ব্যাতিক্রমী এক প্রবাসী সংগঠন। দুর্গা পুজো আর রবীন্দ্রজয়ন্তী ঘিরে তার জন্ম হয়নি, কালিপুজোর সূত্র ধরে তাতে দুমাসে ঘুণও ধরেনি। উত্তরপাড়া আর খড়গপুর এখানে রাতের বেলা শব্দবাজি করে প্রাণ খুলে হাসে। চন্দন নগরের তুলির টানে মুগ্ধ হন নেতাজী কন্যা আর সত্যজিতে সঙ্গীতে সৃষ্টি হয় অনন্য নৃত্য শিল্প। লাজুক বালুরঘাটের শিল্পীসত্ত্বা এখানে আবিষ্কৃত হয় মঞ্চে আর কসবা শাড়ির আলোড়ন তোলে সহজপাঠে। বাবামায়ের ভিড়ে সরগরম হয় পিকনিক আর পড়তে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হয় দুর্গাপুর। সম্প্রীতি শুধু এক সংগঠন নয়, সম্প্রীতি আমাদের সবার আবেগ। প্রবাস যেখানে স্বদেশ, বাঙ্গালিয়ানা যেখানে অনির্ণীত এক মানসিকবন্ধন।
‘উইন্ডোস’ এর আবহাওয়ে যেন তারই প্রখর অনুরণন। সাবেকী বাঙ্গালিয়ানা কোথায়? শান্তিনিকেতনে, খোয়াইপাড়ে। সাবেকী বাঙালি কে? বিশ্বনাথ মজুমদার। চলমান বাঙ্গালিয়ানা কোথায়? দুরন্ত এক্সপ্রেসে। আধুনিক বাঙালির বয়েস কত? পোস্তর বয়েসি। বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ কোথায় ? শিবপ্রসাদ-নন্দিতার চিন্তাধারায়। এই চিন্তাধারাতেই – প্রত্যেক বাঙ্গালী দেখার সুযোগ পাক, প্রবাসী মানে প্রফিট আর স্বদেশ মানে মাস-স্কেল, এই গণিতের বাইরেও যে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যেতে পারে দর্শকের সঙ্গে, এটা বুঝতে গেলে মনটাই যে বড় দরকার। “আমাদের একটা ইচ্ছে, আপনারা সিনেমাটা হলে দেখান”, বললেন ‘উইন্ডোস’ এর ইন্দ্রাবতী। এখানেই যেন লুকিয়ে আছে বাংলা দর্শকের প্রতি চাপা এক অভিমান। চোরাশিকারিদের দাপটে প্রত্যাশা কমতে কমতে কি এতটাই তলানিতে ঠেকেছে যে হলে বসে সিনেমা দেখাটাই একটা কী র্তি?
হল’এই হবে, কলকাতা যে দিন দেখবে, প্রবাসীও সেসময়ে হল’এ দেখবে। প্রথম বার, জার্মানি কিংবা অ-ইংরেজিভাষী ইউরোপের এক দেশে বাঙ্গালী প্রত্যাশার পারদ নিয়ে হল’এ ভিড় করবে। পুজোর মুখে, শনিবার।সেই হারিয়ে যাওয়া ম্যাটিনি শো’তে।
২৩শে সেপ্টেম্বর, দুপুর তিনটে, মিউনিখ, জার্মানি। ‘প্রজাপতি’র মিউনিখ ম্যাটিনিতে সবার সাদর আমন্ত্রন।
Windows Production
Shaibal Giri.
© windowsproductions.com. All Rights Reserved
Top wpDiscuz